শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শবেবরাতের তাৎপর্য ও বিধান

মাওলানা আবদুল জাব্বার:
গ্রামে-গঞ্জে এখনো দেখা যায়, শবেবরাত আসার আগ থেকেই প্রত্যেক মসজিদে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত ও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বাসাবাড়িতে রুটি-হালুয়া, পোলাও, কোরমা, ফিরনি ইত্যাদি তৈরি করে ধুমধাম করে আনন্দের সঙ্গে খেতে দেখা যায়। এই দিনে দেরিতে বাজারে গেলে গোশত পাওয়া মুশকিল। এভাবে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়ে থাকে শবেবরাত উদযাপন করার জন্য। অনেকে এমন আছেন যে, নতুন জামা নতুন টুপি পরে আতর-গোলাপ মেখে রাতভর নফল নামাজ, জিকিরে কাটিয়ে দেন। সকালে ফজরের নামাজ আদায় না করেই ঘুমিয়ে যান, পরদিন ১০টায় জাগেন।

একটি কথা সবারই জানা থাকা জরুরি, ১০০ কোটি রাকাত নফল নামাজ এক রাকাত ফরজ নামাজের সমান নয়। তবে হ্যাঁ, নফল নামাজে অনেক সওয়াব রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কখনো ফরজ নামাজের সমান নয়।

তার পরও সমাজে এসব চলছে কীভাবে? এসব ধারণার পেছনে মূলত কিছু দুর্বল, বানোয়াট ও মনগড়া কথা যা হাদিস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর কিছু সংখ্যক অদূরদর্শী অল্পশিক্ষিত আলেম এ জাতীয় হাদিসকে পুঁজি করে রঙ-ঢঙ লাগিয়ে আলোচনা করার ফলে সমাজে এর প্রচলন হয়ে গেছে।

এলাকার সব মুসল্লিকে দলে দলে মসজিদে গিয়ে বরাতের আলোচনা, নফল ইবাদতে সারা রাত কাটিয়ে দেওয়াকে আবশ্যক বিষয় হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলির ওপর এর অবস্থান দেখা যাচ্ছে। আর যুবকরা দলবেঁধে এ মসজিদ থেকে ওই মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করবে, মাঝে মধ্যে দুই-চার রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং বলাবলি করবে কে কত রাকাত নামাজ আদায় করল? কে কতবার দরুদ পড়ল? আবার বেশিরভাগ সময় পটকা ও আতশবাজি করবে, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে খুব জোরে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করবে আর বাসাবাড়িতে কোরমা-পোলাও-পায়েস ও নানা রঙের খাবার তৈরিতে মা-বোনেরা এতই ব্যস্ত হয়ে পড়বে যে, ফরজ নামাজের কথাও ভুলে যাবে অথবা নামাজ আদায় করার সময় পাবে না! বেশির ভাগ এলাকায় এমনটিই দেখা যায়, তা হলে বিষয়টি কেমন হলো? শবেবরাতের অর্থ কী দাঁড়াল?

প্রকৃত বিষয় হচ্ছে- ইসলামে যে বিষয়টি যেভাবে আছে, তার চেয়ে কিছু বাড়িয়ে অথবা কাটছাঁট করে কমবেশি করার কোনো সুযোগ নেই। যেমন মাগরিবের ফরজ নামাজ তিন রাকাত, কেউ ইচ্ছা করে এটাকে চার রাকাত অথবা দুই রাকাত আদায় করলে যেমন সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ হবে, তদ্রুপ ইসলামের অপরাপর বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও তাই। অর্থাৎ শরিয়তের কোনো বিধানে বাড়ানো বা কমানোর কোনো ক্ষমতা কারও নেই।

শাবানের মধ্যবর্তী রাত বা ‘নিসফুস’ শাবানের মর্যাদা ও আমাদের করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলো হলো-

হজরত আলি (রা.) রাসুল (সা.) থেকে যে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন- যখন শাবান মাসের মধ্যরাত্রি আসবে তখন সে রাত ইবাদতের মাধ্যমে কাটাবে আর দিন কাটাবে রোজা রাখার মাধ্যমে। কেননা, আল্লাহ ওই দিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম আকাশে অবতরণ করে বলেন- ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? যাকে আমি ক্ষমা করব, কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছে কি? যাকে আমি রিজিক দেব? কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? যাকে আমি বিপদ থেকে উদ্ধার করব? ইত্যাদি।

হজরত আবু মুসা (রা.) নবী কারিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ উল্লিখিত হাদিস ছাড়া আরও অনেক হাদিস রয়েছে, যে সব হাদিসে শবেবরাতের মর্যাদার কথা পাওয়া যায়। উল্লিখিত হাদিসগুলো সনদের দিক থেকে দুর্বল।

কিন্তু একটি হাদিসও এরূপ নেই, যে হাদিসে বলা হয়েছে- এই রাতে পুরুষ লোক দলে দলে মসজিদে বা কোনো বিশেষ স্থানে একত্র হয়ে মিষ্টি, কোরমা, পোলাও, বিরিয়ানি খাবে বা একত্রে দোয়া-মোনাজাত করবে, একত্রে নফল নামাজ আদায় করবে এবং মহিলারা সারা দিন পিঠা-পায়েস তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে। ফরজ নামাজ আদায় করারও সময় পাবে না, যেমনটা অনেক বিয়েবাড়িতে ঘটে।

এ রাতে ইবাদত করতে চাইলে ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করে একাকী কিংবা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে নিরিবিলি ইবাদত করার পদ্ধতিই অপেক্ষাকৃত উত্তম। শুধু শবেবরাতের রাতেই আল্লাহতায়ালা শেষ রাতে বান্দাকে মাগফেরাতের জন্য আহ্বান করেননি, বরং সারা বছরের প্রতি রাতেই রাতের শেষভাগে আল্লাহ বান্দাকে বিশেষভাবে ক্ষমা করার জন্য আহ্বান করে থাকেন। তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে থাকেন। তাহাজ্জুদের নামাজ মনিবের কাছে গোলামের চাওয়া-পাওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম এবং শরীরের মেদ ভুঁড়ি ও বাত কমানোর জন্য এক অনন্য উপাদান, এ উপাদানটি যে দেশে যত বেশি কাজে লাগাবে, সে দেশের জনগণ তত বেশি শান্তি, সমৃদ্ধি লাভ করবে, পরনির্ভরশীলতা দূর হবে, আদর্শ জাতি হিসেবে পরিগণিত হবে। আমাদের উচিত এ উপাদানটিকে শক্ত করে ধারণ করা।

রাতের বেলা সুরমা সুগন্ধি ও ভালো পোশাক পরে ভালো খাবার খেয়ে নিজস্ব পরিবেশে থেকে নফল নামাজ, জিকির, দোয়া দরুদ পড়ে রাত্রি জাগা অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো অসীম সওয়াবের কাজ (আর এটা শুধু শবেবরাতেই নির্দিষ্ট নয়) তাতে কোনো সন্দেহ নেই, দিনের বেলা রোজা রাখার জন্যও হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই কমপক্ষে তিনটি নফল রোজা রাখার কথা হাদিসে পাওয়া যায়। আর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসেই সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রেখেছেন এই দৃষ্টিকোণ থেকে শাবান মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এই তিনটি রোজা রাখাই উত্তম।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION